লন্ডন, ১৮ জুলাই ২০২৫:
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান দাবি করেছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লন্ডনসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বিপুল সম্পত্তি বিক্রির চেষ্টায় জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এমন সময়ে তথ্যগুলো উঠে এসেছে যখন বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ ও তাদের পরিবারের হাতে থাকা অবৈধ অর্থ উদ্ধারে বাংলাদেশের বর্তমান তত্ত্বাবধায় সরকার দুর্নীতিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে। এমতাবস্থায় এই লেনদেন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (NCA) ইতোমধ্যেই কয়েকজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকের কোটি কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ করেছে। এদের অনেকেই বাংলাদেশে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তাধীন বা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।
বিক্রির উদ্যোগ নেয়া উল্লেখযোগ্য সম্পত্তিগুলোর মধ্যে সোবহান পরিবারের লন্ডনের অভিজাত নাইটসব্রিজ এলাকায় প্রায় ২৪.৫ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের চারতলা টাউনহাউজের মালিকানা ইতিমধ্যে হস্তান্তর করেছে। শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা অ্যানিসুজ্জামান চৌধুরী রিজেন্টস পার্কের কাছাকাছি একটি ১০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের বাড়ি বিক্রি ও রিফাইন্যান্স করেছেন। বিতর্কিত ব্যবসায়ী রাহমান পরিবার লন্ডনের গ্রোসভেনর স্কয়ারে ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের অ্যাপার্টমেন্টে মালিকানা ধরে রেখেছে, যা বর্তমানে জব্দের আওতায় রয়েছে।
বাংলাদেশের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে, যাতে এসব সম্পত্তি জব্দ করে সেগুলোর প্রকৃত উৎস ও লেনদেন প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখা হয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে এই সম্পদের উৎস অনুসন্ধান একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিভিন্ন ব্রিটিশ আইনজীবী প্রতিষ্ঠান জাসওয়াল জনস্টোন (Jaswal Johnston), মেরালি বিডেল (Merali Beedle) এর মত আরো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এই লেনদেনে অংশ নিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে এত বড় অঙ্কের সম্পদ বিদেশি নাগরিকদের পক্ষে রেজিস্ট্রেশন ও রিফাইন্যান্স করা সম্ভব হলো, যেখানে এসব ব্যক্তিদের আর্থিক উৎস সন্দেহজনক।
আন্তর্জাতিক স্বচ্ছতা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকে (Transparency International UK) এবং অন্যান্য সংস্থা এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সম্পদের প্রকৃত মালিকানা, উৎস এবং লেনদেন প্রক্রিয়া খোলাসা করার আহ্বান জানিয়েছে।